খাগড়াছড়ি প্রতিবেদকঃ
সাহিত্য একটা জাতি এবং মানুষের জন্য টিকে থাকার দলিল উল্ল্যেখ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আমরা যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক সেই মুহূর্তে পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্থানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজারকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবিদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, লেখক, ডাক্তারসহ যেখানে যাকে পেয়েছে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ওরা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে যদি মেধাশূন্য করা যায়, তাহলে আমাদের দেশ পঙ্গু হয়ে যাবে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে আমাদের বুদ্ধিজীবীরাই মহান অবদান রেখেছেন।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ির অন্যতম ভিন্নধারার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে, জেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি প্রফেসর বোধিস্বত্ব দেওয়ান’র সভাপতিত্বে ১০ বর্ষপূর্তি ও সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
খাপাজেপ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু আরো বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ দেশে যত বই-পুস্তক ছাপানো হয়েছে, নাটক-নাটিকা প্রদর্শিত হয়েছে, যত সংগীত রচয়িত হয়েছে এক কথায় বলতে গেলে শিল্প-কর্মে যে অগ্রগতি হয়েছে। তাই আমাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিকভিত্তিক জাতিসত্তাকে জনগণের কাছে বোধগম্য করে তুলেছে। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করেই জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত। আমরা সকলেই এদেশের নাগরিক। এদেশের যে চেতনায় আমরা উদ্বুদ্ধ তার উৎস ভাষা ও সংস্কৃতি। এই জাতীয়তাবোধের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বাংলার জয়গান গেয়ে গেছেন তিনি। বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথের সংগীতই আমাদের জাতীয় সংগীত।
“সাহিত্য হোক সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতিয়ার” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি জেলা সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত দশম (১০) বর্ষপূর্তি উদযাপন আনুষ্ঠনে প্রধান আলোচক ছিলেন, সাহিত্যিক ও গবেষক কবি হাফিজ রশিদ খান। ইউসুফ আদনান’র সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক, গবেষক ও জাবারাং কল্যাণ সমিতি’র নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম।
সাহিত্য সম্মেলনে, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও লেখক প্রফেসর ড. সুধীন কুমার চাকমা, প্রাবন্ধিক লেখক, গবেষক ও কবি ধর্মরাজ বড়–য়া, লেখক ও গবেষক অংসুই মারমা, গীতিকার ও নাট্যকার মর্তুজা পলাশকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাহিত্য সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই “গিরিধারা’ সংখ্যা-১০ নামক সাহিত্য সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রিপন চাকমা, চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের কন্ঠ শিল্পী আবুল কাশেম, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক জিতেন চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ সহকারী কর্মকর্তা শাহনাজ সুলতানা, কুকিছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমনা চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুই চিং থুই মারমা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইমন ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি সনাকের এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ আবদুর রহমান, সনাক সদস্য সাংবাদিক মোঃ জহুরুল আলম, জাবারাং কল্যাণ সমিতি’র সেতু এমএলই প্রকল্প সমন্বয়ক বিনোদন ত্রিপুরাসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply